নুরুল ইসলাম খান সুলতান এন.আই. খান নামে সকলের নিকট পরিচিত। একজন ভালো মানুষ। সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেশি হৃদ্যতা ছিলো। ১৯২১ সালের ২৪ নভেম্বর বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এই বছর ২০২০ সালে তার জন্মশতবার্ষিকী। তার পৈতৃক নিবাস পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায় সেহাঙ্গল গ্রামে। পিতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান ও মাতা সামিছুন নেছা। লেখাপড়া শুরু হয় বরিশাল জিলা স্কুলে। পরে কলকাতায় রিপন স্কুল ও কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। রাজনীতির কারণে ডিগ্রি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শের প্রতি অনুগত ছিলেন। কলকাতায় বিপ্লবী দল ও ফরোয়ার্ড বøকের সদস্য এবং ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী ছিলেন। ১৯৪১ সালে কলকাতায় হলওয়েল মুভমেন্টের সময় পুলিশের নির্যাতনে নাকে আঘাত পান। অনেক দিন ভুগতে হয়েছে। ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে বরিশালে চলে আসেন। বরিশালে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংগঠনিক কার্যক্রম ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে বরিশাল জেলা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তার সম্পাদনায় ‘সাপ্তাহিকী’ নামে একটি পত্রিকা এবং ইংরাজি ভাষায় ‘খাদেম’ প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৬৬ সালে আইয়ুব বিরোধী লেখার জন্য পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে বরিশাল জেলা ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পূর্ণসমর্থন ও সহযোগী ছিলেন। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বরিশাল পুলিশ সুপারের সরকারি বাসভবনে বরিশাল শহরে অবস্থানরত তৎকালীন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যসহ সকল রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের সকল বিভাগের প্রধানদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রগতিশীল বামপন্থীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া, যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল নির্ধারণে মতদ্বৈধতার কারণে ৭১’র এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বরিশাল ল’ কলেজে বামপন্থীরা আলাদা ক্যাম্প স্থাপন করলে তিনি মুখ্য ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালে ইউপিপি-এর কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ‘পাঠক মজলিশ’ ও ‘বরিশাল সাহিত্যসেবা’ তার প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৮ সালে বরিশাল জেলা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালের ৯ এপ্রিল বরিশালে মৃত্যুবরণ করেন।
আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীন বরিশাল জেলায় উজিরপুর উপজেলার চাঙ্গুরিয়া গ্রামে ১৯২৪ সালে ৩১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌ: মোহাম্মদ ইসমাইল ও মাতা বেগম ফায়জুন নেছা। বাবার চাকরির সুবাদে তার শৈশব কাটে পটুয়াখালী শহরে। পটুয়াখালী জুবলী স্কুল, ব্রজমোহন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়া করেন। তিনি কেমিস্ট্রিতে এমএ অনার্স ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। অল ইন্ডিয়া বৃত্তি নিয়ে লÐন গøাস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করেন। পরে ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। কর্মজীবনে সরকারের যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সৌদি আরবে ইকনমিক মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনেক দেশ বিদেশ ভ্রমণ করেন। অবসর জীবনে সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯০-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২ মার্চ ২০১৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আলী আহমদ বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার মসজিদবাড়ি গ্রামে ১৯৪৮ সালের ২২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মমতাজ উদ্দিন আহমদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ¯œাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে একটি মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা। সাংস্কৃতিক জগতের সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের উপস্থাপক, লেখক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। নোবেল বিজয ঔপন্যাসিক কামিলো হেসে সেলার পাঙ্কুয়াল-এর ‘দুয়ার্তের পরিবার’, নোবেল বিজয়ী লেখক নাগিব মাহফুজের ‘চোর ও সারমেয়’, ‘খোঁজ’, ইভান তুর্গেনেভের ‘প্রথম প্রেম’ প্রভৃতি বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ইংরেজি ও স্পেনিশ ভাষায় দক্ষ। বিস্ময়করভাবে ভালো বলেন এবং অনন্য সাধারণ বাগ্মী। ২০০০-২০০১ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অবসর সময় লেখালেখি নিয়ে সময় কাটান ।
গোলাম মুর্তজা বরিশাল শহরের আমানতগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দলিল উদ্দিন আহম্মদ। তিনি ব্রজমোহন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ চলচিত্র অধিদপ্তরে মহাপরিচালক এবং মৎস উন্নয়ন করপরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০২-২০০৩ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
ইসমাইল হোসেন হাওলাদার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তৈয়ব আলী হাওলাদার। তিনি চরামদ্দি স্কুল এবং বরিশালে লেখাপড়া করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ল’ পাশ করেন। দীর্ঘদিন আইন পেশায় নিয়জিত ছিলেন। পরবর্তীতে গার্মেন্টস ও বায়িং হাউজের ব্যাবসায় যুক্ত হন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। লায়ন্স এর সক্রিয় সদস্য ও সমাজসেবক। ২০০৪-২০০৫ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
এ.কে.এম. শামছুল হক বরিশাল জেলায় উজিরপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বরিশাল শহরের আলেকান্দায় জব্বার মিয়ার গলিতে তার শৈশব কাটে। পিতা আলহাজ মোবারক আলী মিয়া। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল এবং ব্রজমোহন কলেজে লেখাপড়া করেন। কর্মজীবনের শুরুতে পশ্চিম পাকিস্তানে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থায় চাকরিতে যোগ দেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে অবসর গ্রহন করেন। ১৯৯৪-২০০৫ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৬-২০০৮ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী সংঘ জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মোঃ শাহজাহান খান বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামে ১৯৫০ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহব্বত আলী খান। কর্মজীবনের প্রথমে শিপিং করপরেশনে চাকরি করেন। পরবর্তীতে শিপিং ব্যাবসা শুরু করেন। তিনি এস.বি. শিপিং লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বহু দেশ বিদেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি ছিলেন। ২০০৯-২০১৩ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য।
সরদার মোঃ মজিবুর রহমান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সুলতান হোসেন সরদার। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন বাবুগঞ্জে। অতপর গৌরনদী কলেজে। কর্মজীবনে বীমা পেশায় নিয়োজিত হন। দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে অবসর সময় কাটান। ২০১২-২০১৩ সালে বরিশাল জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৪-২০১৯ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান জেলা সমিতির নির্বাহী সদস্য।
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ইকবাল হোসেন তাপস, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের দরিয়াবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৫ সালের ৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ সফিউদ্দিন হাওলাদার একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস দরিয়াবাদ গ্রামে হলেও পরবর্তীকালে তার বাবা বরিশাল শহরের অক্সফোর্ড মিশন রোডে স্থায়ী নিবাস স্থাপন করেন। তিনি সরকারি বরিশাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য জাপানে গমন করেন। জাপান থেকে তিনি জাপানি ভাষা শিক্ষা এবং কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিগ্রী অর্জন করেন। ইকবাল হোসেন তাপস ১৯৮৪ সালে জাতীয় পার্টির ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদে নির্বাচন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের (বরিশালের) সর্বাধুনিক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ”সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল” এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বর্তমান পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি একটি জাপানিজ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ITOCHU Corporation এর সহ-প্রতিষ্ঠান ইয়োকোহামা লেভেলস এন্ড প্রিন্টিং কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও সিইও পদে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “বরিশাল ফরএভার লিভিং সোসাইটির” প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি বরিশাল জেলা সমিতি, ঢাকা’র দ্বিতীয় মেয়াদে (২০২৩-২০২৪) সফল সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।